ক্যান্সার চিকিৎসার পর আপনি চাইবেন একটি সুস্থ্য জীবনে ফিরে যেতে কিন্তু আপনি প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ্যতার পর একজন ক্যান্সার জয়ী বা সার্ভাইবর হিসেবে দীর্ঘ সময় বাকী জীবন সুস্থ্যভাবে উপভোগ করতে চাইবেন | সঠিক সুস্থ্যতার উপদেশ অথবা নির্দেশনা একজন ক্যান্সার রোগী এবং রোগীর ক্ষেত্রে একই রকম নিয়মিত ব্যায়াম করুন, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন, স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখুন, পর্যাপ্ত ঘুমান, দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন, ধূমপান ও এলকোহল বর্জন করুন |
ক্যান্সার জয়ী বা সার্ভাইবরদের জন্য নিম্ন বর্ণিত পদক্ষেপ বাড়তি সুবিধা দিবে |এই পদক্ষেপগুলো আপনার জীবনের মান উন্নত করবে এবং জীবনকে উপভোগ করে তুলতে সাহায্য করবে |
ব্যায়াম:
চিকিৎসার পর নিয়মিত ব্যায়াম আপনাকে দ্রুততার সাথে সুস্থ্য করে তুলবে | নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে ক্যান্সার সার্ভাইবরদের :
- শারীরিক শক্তি ও উদ্যম বেড়ে যাবে
- অবসাদ অথবা বিষন্নতা কমে যাবে
- দুঃচিন্তা কমে যাবে
- মানসিক প্রশান্তি বেড়ে যাবে
- ব্যাথা কমে যাবে
- ভালো ঘুম হবে
- ক্যান্সার ফিরে আসার সম্ভাবনা কমে যাবে
প্রাত্যহিক জীবনে কিছু শারীরিক পরিশ্রম এমন কোন কঠিন ব্যাপার নয় |প্রায়শই সিঁড়ি দিয়ে উঠা, পার্কে হাটা এগুলো সহজেই করা যায় | যেকোন ব্যায়াম করার পূর্বে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং ডাক্তারের অনুমতি স্বাপেক্ষে ধীরে ও সহজ ব্যায়ামগুলো শুরু করুন |ক্যান্সার সার্ভাইবরদের জন্য আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়ামের অনুমোদন করেছে |সুস্থ্য জীবনে ফিরে আসার পর আপনি ব্যায়াম করে ভালো বোধ করতে পারবেন |কিছু সময় আপনার ব্যায়াম করতে ভালো লাগতে নাও পারে এতে দোষের কিছু নাই |চিকিৎসার প্রলম্বিত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও অবসাদের জন্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা বিলম্বিত হতে পারে |
যখনই ভালো বোধ করবেন, আপনারা বাসার চারিপাশে হাটুন |আপনার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ |নিয়মিত ব্যায়ামের অনেকগুলো উপকারীতা আছে |গবেষণায় দেখা গেছে ব্যায়াম শুধু ক্যান্সার ফিরে আসা কমিয়ে দেয় না , এটা ক্যান্সার জনিত মৃত্যুও অনেক কমিয়ে দেয় |এছাড়া ব্যায়াম আপনার হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ও শরীরের অন্যান্য সিস্টেমকে সচল রাখে|সার্ভাইবররা ক্যান্সার ফিরে আসা নিয়ে সবসময় চিন্তিত থাকে এবং এর বিনিময়ে সবকিছু করতে প্রস্তুত থাকতে চায় |
পুষ্টিকর খাবার:
আপনার খাবারে যথেষ্ট পরিমানে সবজি, ফল ও শসা যোগ করুণ |আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির নির্দেশনা হচ্ছে:
- প্রতিদিন আড়াই কাপ সবজি ও ফল খান
- স্বাস্থ্যকর চর্বি খান, যাতে থাকে ওমেগা ও ফ্যাটি এসিড, এগুলো মাছ ও বাদামে পাবেন
- বেছে নিন কম চর্বি ঘনত্বের (Low Saturated Fat) আমিষ ,যেমন – মাছ, পাতলা মাংস, ডিম, বাদাম বীজ ও সীম
- পছন্দ করুন স্বাস্থ্যকর শর্করা , যেমন- শস্য, সিম জাতীয় , ফল ও সবজি
উপরোক্ত খাবারগুলো আপনাকে যথেষ্ট পরিমানে ভিটামিন ও পুষ্টি দিয়ে আপনাকে আরো সবল ও শক্তিশালী করবে |এটা জানা নাই যে, কোন নির্দিষ্ট খাবার অথবা পুষ্টি ক্যান্সার ফিরে আসাকে প্রতিহত করবে, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে কম চর্বিযুক্ত খাবার নির্দিষ্ট ফলাদি ও সবজি ভালো ফলাফল দিতে পারে |এ থেকে বুঝা যায় বিভিন্ন রকমের ফল ও সবজিযুক্ত খাবার সবার খাওয়া উচিত |
যখন আপনি স্বাভাবিক খাবারের সাথে সম্পূরক ভিটামিন ও মিনারেল ওষুধ খান তখন উপরোক্ত খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায় |কোন কোন সার্ভাইবর মনে করেন অল্প পরিমানে ভিটামিন ও মিনারেল গ্রহণের চাইতে বেশি খেলে উপকার বেশি হবে কিন্তু এই ধারণা সঠিক নয় বরং এটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর |যদি আপনি কোন ভিটামিনের কথা চিন্তা করেন তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন কোন মাল্টিভিটামিন আপনার জন্য সঠিক |
সঠিক ওজন :
চিকিৎসার সময় আপনার ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে অথবা কমে যেতে পারে |চেষ্টা করুন আপনার সঠিক ওজন বজায় রাখতে |আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন আপনার সঠিক ওজন সম্বন্ধে এবং জেনে নিন কিভাবে সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রণ করবেন |ওজন বৃদ্ধির জন্য যে খাবারগুলো সহজ ও পছন্দনীয় সেগুলোই খাবারের জন্য নির্বাচন করুন |পুষ্টিবিদের সাথে কথা বলুন ওজন বৃদ্ধি করার পদ্ধতি নিয়ে |ব্যাথা, বমি ভাব বা অন্যান্য চিকিৎসাজনিত উপসর্গ যা আপনার ক্ষুধাকে প্রভাবিত করে, এগুলো নিরাময়ের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন |আপনার ওজন কমাতে সহজ ও ধীরে পদক্ষেপ নিন |সপ্তাহে ২ পাউন্ড অথবা ১ কেজির বেশি ওজন কমানো ঠিক নয় |আপনার খাবারে ক্যালরি কমিয়ে, ব্যায়াম করে ওজনে সমতা আনতে পারেন |অতিরিক্ত মাত্রায় ওজন কমানো একটি ভীতিকর অবস্থা , ধীরে ও সহজভাবে ওজন কমান |
পর্যাপ্ত বিশ্রাম :
ঘুমের সমস্যা ক্যান্সার রোগী ও সার্ভাইবরদের একটি সাধারণ সমস্যা |এটা হতে পারে শারীরিক পরিবর্তন, চিকিৎসার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া, বিষন্নতা ও অন্যান্য কারনে কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুম আপনার সুস্থ্যতার জন্য অপরিহার্য |পর্যাপ্ত ঘুম আপনাকে পূর্ণ যৌবন ফিরিয়ে দেয়, আপনাকে সতেজ করে এবং ঘুম থেকে উঠার পর আপনার কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় |পর্যাপ্ত ভালো ঘুম জ্ঞানকে বাড়িয়ে দেয়, হরমোনের কার্যকে প্রভাবিত করে এবং রক্তচাপ কমিয়ে দেয় |সর্বোপরি আপনাকে ভালো বোধ করতে সহায়তা করে |
পর্যাপ্ত ভালো ঘুমের জন্য স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন করুন :
- বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার ৮ ঘন্টা পূর্বে চা , কফি বর্জন করুন
- প্রত্যহ একই সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন
- ঘুমাতে যাওয়ার ১-২ ঘন্টা পূর্বে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, টেলিভিশন দেখা বন্ধ করুন
- ঘুমাতে যাওয়ার ২-৩ ঘন্টা আগে ব্যায়াম শেষ করুন
- আপনার শোবার ঘর শান্ত ও মৃদু আলোয় রাখুন
দিনের বেলা যদি আপনি অতিরিক্ত তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকেন, তাহলে আপনার ডাক্তারের কথা বলুন |আপনি সম্ভবত অনিদ্রায় ভুগছেন এটা ক্যান্সার ও চিকিৎসার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার জন্যও হতে পারে |
ধকল :
ক্যান্সার সার্ভাইবর হিসেবে আপনি শারীরিক, আবেগ এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার শিকার হতে পারেন যা আপনার মনের উপর চাপ প্রয়োগ করে |যদিও এমন কোন প্রমাণ নাই যে, ধকল কমালে ক্যান্সার ফিরে আসার সম্ভাবনা কমে যায় |উপযুক্ত কৌশল ব্যবহার করে ধকল কমাতে পারেন যা আপনার জীবনযাত্রার মান বাড়িয়ে দিয়ে বিষন্নতা, উদ্বেগ এবং ক্যান্সার চিকিৎসাজনিত উপসর্গ কমিয়ে দিবে |
ধকল নিরাময়ে নিম্নলিখিত কার্যকরি কৌশল অবলম্বন করতে পারেন :
- বিনোদন, ধ্যান প্রক্রিয়া
- কাউন্সেলিং
- ক্যান্সার সাপোর্ট গ্রুপ
- উদ্বিগ্ন ও বিষন্নতার চিকিৎসা
- ব্যায়াম
- পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সময় কাটানো
ধূমপান পরিহার :
ধূমপান সম্পূর্ণভাবে বর্জন করুন |সিগারেট, তামাক, জর্দা, সাদপাতা বিভিন্ন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় |এখনই তামাক সেবন বর্জন করুন, কেননা এতে আপনার ক্যান্সার ফিরে আসার সম্ভাবনাকে অনেক কমিয়ে দিবে এবং দ্বিতীয় বার প্রাথমিক ক্যান্সারের ঝুঁকি কমবে |যদি আপনি পূর্বে চেষ্টা সত্বেও ধূমপান বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়ে থাকেন তবে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন এই ব্যাপারে সহযোগীতার জন্য |
এলকোহল পরিহার :
এলকোহল সেবন কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, যেমন মুখ ও গলার ক্যান্সার |গবেষণায় এখনও এটা প্রমাণিত নয় যে, এলকোহল সেবন ক্যান্সার ফিরে আসাকে বাড়িয়ে দেয় তবে দ্বিতীয় প্রাথমিক ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাকে ত্বরান্নিত করে |
আপনি যা পছন্দ করেন তাই করেন :
আপনি হয়তো আপনার জীবনধারা পরিবর্তনের পদক্ষেপে চিন্তিত ও হতাশাগ্রস্থ হয়ে যেতে পারেন | জীবনধারা পরিবর্তনের জন্য আপনি যা সহজ ও উপভোগ্য তাই করতে পারেন |জীবনের উদ্দেশ্যগুলোকে পূর্ণ বিন্নাস করুন এবং এগুলো অর্জনে দ্রুত প্রতিজ্ঞ হোন |স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার ও প্রত্যহ নিয়মিত ব্যায়াম রপ্ত করুন কেননা এগুলোই আপনার জীবনধারা পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট |