ফুসফুসের ক্যান্সার
কাদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশী?
ধূমপায়ী পুরুষরা ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী ঝুঁকি পূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। তাঁদের তামাক সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরোগ যেমন- হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং শ্বাস কষ্ট ইত্যাদিতে আক্রান্ত হওয়ার ও ঝুঁকি রয়েছে। ফুসফুসের ক্যান্সারের শতকরা ৮০ ভাগেরই কারণ ধূমপান। এছাড়া আরও অনেক কারণ আছে। যেমন- ‘এসবেসটস’ নিয়ে যারা কাজ করেন তাঁদের ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বিদ্যমান।
সুরক্ষার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থাঃ প্রতিরোধ
আপনি যদি ধূমপায়ী হন তাহলে আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে দ্রুত ধূমপান ত্যাগ করুন। যদি অধূমপায়ী হন তাহলে কখনো ধূমপান শুরু করবেন না। আপনার বন্ধু ও প্রিয়জনেরা ধূমপায়ী হলে তাঁদেরকে ধূমপান ত্যাগ করতে বলুন। ধূমপায়ীদের সংস্পর্শে বেশীক্ষণ থাকবেন না।
মুখের ক্যান্সার
কাদের হবার সম্ভাবনা বেশী?
যারা বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা অথবা খৈনি খান; পানের সাথে জর্দ্দা, দোক্তা বা তামাক পাতা অথবা কিমাম খান বা গুল ব্যবহার করেন, তাঁদের মুখের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা খুব বেশী। অপরদিকে যাঁদের দাঁতের গড়ন ত্রুটি যুক্ত অথবা দাঁত কোনো কারণে ভেঙ্গে যায় কিন্তু ভাঙ্গা অংশ ভালভাবে মসৃণ করা হয়না তাঁদের ও মুখের ক্যান্সার হতে পারে।
সুরক্ষার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থাঃ প্রতিরোধ
ধূমপান সহ তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যাদির সবধরণের ব্যবহার বর্জন করলে মুখের ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। প্রতিদিনই নিয়ম করে আয়না দেখে নিজেই নিজের মুখ পরীক্ষা করা দরকার। যদি মুখের মধ্যে কোনো জায়গায় লাল অথবা সাদা ছোপছোপ দেখা যায় যত শীঘ্র সম্ভব ডাক্তার দেখাতে হবে। দাঁত ত্রুটি পূর্ণ হলে অথবা ভেঙ্গে গেলে তা মুখের ভিতরে ক্ষত সৃষ্টি করতেপারে। এরূপ ক্ষত দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং যথাবিহীত চিকিৎসা নিতে হবে। এভাবেই মুখের ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
স্বরতন্ত্রের ক্যান্সার
স্বরতন্ত্রের অধিকাংশ ক্যান্সারই কারসিনোমা, অন্যজাতের (সারকোমা) ক্যান্সার স্বরযন্ত্রকে আক্রমণ প্রায় করেনা বললেই চলে। স্বরযন্ত্রের মধ্যস্থিত ভোকাল কর্ডের ক্যান্সার ধরা পড়ে যায় সবচেয়ে তাড়াতাড়ি। এমন রোগে প্রথমেই গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যায় যা কে অনেক সময় আমরা বলে গ্লা ভেঙ্গে যাওয়া। যা কোনও ওষুধেই সারেনা। তাই কার ও স্বর ভঙ্গ তিন সপ্তাহে ও না সারলে তাঁর উচিত কোন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা। এই ক্যান্সার সূচনাকালে ধরা পড়লে সেরে ওঠার সম্ভাবনা বেশ উজ্বল। কারণ, ভোকাল কর্ডের ক্যান্সার স্বরযন্ত্র থেকে অনেক অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে অনেক সময় নেয়। স্বরযন্ত্রের অন্যত্র কোথাও ক্যান্সার হলে তা সাধারণত ধরা পড়ে অনেক দেরীতে, কারণ তাতে না থাকে যন্ত্রনা, গলাধরা, কাশি বা অন্য কোন ও লক্ষণ। স্বরযন্ত্রের ক্যান্সারের কারণে গলার আশে পাশের গ্রন্থি ফুলতে পারে অথবা কানে ব্যথাও হতে পারে, কারও কারও অবশ্য স্বরযন্ত্রের ক্যান্সারের কারণে গলার ভিতরের এক নাগাড়ে খুস খুস বা কাঁটার মতো কিছু ফুটে আছে এমন মনে হতে পারে। বয়স্কদের তাই গলায় কাঁটা ফোটার মতো অনুভূতি, এক নাগাড়ে গলা ফুসফুস করা কাশি, গিলতে কষ্ট, গলায় বা কানে ব্যথা এবং সর্বোপরি স্বরভঙ্গ হলেই উচিত প্রথমেই কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা। স্বরযন্ত্রের ক্যান্সার নির্ণয় করাটা কোনও বিশেষজ্ঞের পক্ষে মোটেই কষ্টসাধ্য নয়। অন্য সব ক্যান্সারের সঙ্গে স্বরযন্ত্রের ক্যান্সারের চিকিৎসা হয় তিন ভাবে। সার্জারী, রেডিওথেরাপী এবং কেমোথেরাপী এর সাহায্যে।
খাদ্যনালীর ক্যান্সার
পুরুষদের মধ্যে এই ক্যান্সার বেশী দেখা যায়। সাধারণত যাঁদের বয়স ৬০ এর কোঠায় তাঁদের মধ্যে এইটি দেখা যায়। এক হয়? বেশী মদ্যপান, ধূমপান, নিয়মিত বেশী ঝালমসলা বা বেশী গরম খাদ্য গ্রহণ, দীর্ঘকাল এ্যাসিডিটিতে ভোগা ইত্যাদি কারণে। মেয়েডের এই রোগ বেশী হয় খাদ্যনালীর উপরের ভাগে। ছেলেদের খাদ্যনালীর মধ্য এবং নিম্নভাগে। স্বরযন্ত্রের মত খাদ্যনালীতে কারসিনোমাই বেশী হয়।
প্রধান লক্ষণ খাদ্য গ্রহণে কষ্ট, প্রথম প্রথম সেই কষ্ট সীমিত থাকে কেবল শক্ত খাবার দাবার গ্রহণের, পরে রোগী যে কোন তরল খাদ্য গ্রহণেও অসমর্থ হয়ে পড়ে। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বেরিয়াম খাইয়ে খাদ্যনালীর এক্সরে (Ba Swallow X Ray) করলেই সন্দেহ পাকা হতে পারে। এখনএন্ডোস্কোপী (Endoscopy) করে এই রোগ খুব সহজেই ধরা যায়। রোগ নির্ণয় সহজ হলে ও খাদ্যনালীর ক্যান্সারের চিকিৎসা বেশ জটিল, যাহা সার্জারী (সম্ভাব্যক্ষেত্রে), কেমোথেরাপী ও রেডিওথেরাপীর মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।
প্রস্টেট ক্যান্সার
কাদের হবার সম্ভাবনা বেশী?
৫০ বা তাঁর বেশী বয়সী পুরুষই প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। অবশ্য শতকরা ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে এ রোগ ৬৫ বছরের বেশী বয়সীদের মধ্যেই দেখা যায়। কোনো পুরুষের নিকট আত্নীয়দের মধ্যে এক বা একাধিক ব্যক্তির প্রস্টেট ক্যান্সার হবার ইতিহাস থাকলে তাঁর এই ক্যান্সারের আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে। আবার যারা বেশী পরিমাণে প্রানীজ চর্বি খান তাঁদেরও প্রস্টেট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
সুরক্ষার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থাঃ সূচনায় সনাক্তকরণ
রক্তে ‘প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন’ এর মাত্রা (PSA ) পরীক্ষা এবং আঙ্গুল দিয়ে মলাশয় পরীক্ষা বা ‘ডিজিটাল রেক্টাল এগজামিনেশন’ (DRE) এর মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়েই প্রস্টেট ক্যান্সার সনাক্ত করা যায়। এ ব্যাপারে আপনাকে কি করতে হবে সে বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
আপনার বয়স যখন ৫০ বছর পূর্ণ হবে তখন থেকেই আপনাকে প্রতি বছর নিয়মিতভাবে ওপরে উল্লেখিত পরীক্ষাগুলো করাতে হবে। এসব পরীক্ষার সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন, যাতে এ পরীক্ষার ব্যাপারে আপনি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আপনি যদি প্রস্টেট ক্যান্সারের বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকে (যদি আপনার বাবা বা অন্য কোনো নিকট আন্তীয়ের কম বয়সে প্রস্টেট ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে) তাহলে আপনার বয়স ৮৫ বছর হলেই এসব পরীক্ষা করান।
বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার / কোলন ক্যান্সার
কাদের হবার সম্ভাবনা বেশী?
বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার সাধারণত ৫০ বছরের বেশী বয়সীদের মাঝেই দেখা দেয়। যাঁদের এই রোগের ব্যক্তিগত বা পারিবারিকভাবে ইতিহাস আছে এবং মলাশয় বা মলদ্বারে ‘পলিপ’ আছে অন্যদের তুলনায় তাঁদের এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশী। যারা বেশী পরিমানে চর্বিযুক্ত খাবার খান, যাঁদের দেহের ওজন বেশী, যারা ধূমপান করেন এবং যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন না বা সচরাচর নিষ্ক্রিয় থাকেন তাঁদের ক্ষেত্রে বৃহদন্ত্রের ক্যান্সারের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা সমধিক।
সুরক্ষার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থাঃ প্রতিরোধ এবং সূচনায় রোগনির্ণয়
বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার প্রায় সবক্ষেত্রেই ‘পলিপ’ বা ‘গেজ’ এর মাধ্যমে শুরু হয়। ক্যান্সার হওয়ার পূর্বেই পরীক্ষার মাধ্যমে ‘পলিপ’ সনাক্ত করা গেলে এ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যদি ক্যান্সারে পরিণত হওয়ার পূর্বেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ‘পলিপ’ আপসারন করা যায় তাহলে এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। অল্প চর্বিযুক্ত খাবার এবং বেশী ফল ও শাক সবজি গ্রহণ এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।
৫০ বছর বয়স থেকে শুরু করে সবার জন্য নিচের পরীক্ষাগুলো করতে হবেঃ
- প্রতি বছর ‘মলে রক্তের উপস্থিতি পরীক্ষা’ (Fecal Occult Blood Test – FOBT)
- প্রতি পাঁচবছর অন্তর ‘সিগমোইডোস্কোপের সাহায্যে বৃহদন্ত্র পরীক্ষা’(Flexible Sigmoidoscopy)
- প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ‘ডবলকনট্রাষ্টবেরিয়ামএনিমা’ (Double Contrast Barium Enema)
- প্রতি দশ বছর অন্তর ‘বৃহদন্ত্রেরপরীক্ষা’ (Colonoscopy)
আপনার ডাক্তার আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত পরীক্ষা সম্পর্কে আপনাকে পরামর্শ দিতে পারেন। যদি আপনি বৃহদন্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন তাহলে কখন কোন পরীক্ষা করতে হবে তা নিয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন।
ক্যান্সার হতে সুরক্ষার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা
সূচনায় সনাক্তকরণঃ
বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার সম্পর্কে জানা থাকলে এবং কি করলে তা প্রতিরোধ বা প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা যায় তাঁর উপায় জানা থাকলে, আপনি আপনার জীবন বাঁচাতে পারেন। ক্যান্সার শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আগেই যদি সনাক্ত করা যায় তা হলে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে অল্প বিস্তর কিছু করার সুযোগ পাওয়া যায় । যে সব ক্যান্সারে পুরুষেরা সচারচর আক্রান্ত হন সেগুলো হল প্রস্টেট , ফুসফুস এবং বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার। এসব ক্যান্সার সম্পর্কে জানা থাকলে এবং তাদের প্রাথমিক ভাবে সনাক্ত বা প্রতিরোধ করা গেলে ক্যান্সার মুক্ত থাকাযায়।