ক্যান্সার প্রতিরোধে জরায়ুমুখ ক্যান্সার একটি সফল উদাহরন। অতি সহজে এবং খুব কম খরচে ক্যান্সার হওয়ার পূর্বে ও প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ সনাক্ত করা যায়। এতে ক্যান্সার নিরাময় হওয়ার সুযোগ থাকে শতভাগ। রোগের পর্যায় যত বাড়ে রোগ নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা ততই কমতে থাকে। তবে জরায়ুমুখের ক্যান্সার এমন এক ক্যান্সার যা দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে সনাক্ত হলেও নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে শতকরা ৬০ হতে ৭৫ ভাগ। এমনকি রোগ অনিরাময়যোগ্য হলেও চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে উপসর্গ মুক্ত স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়।
যে বয়সে নারীরা জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন:
সাধারYZ ৩৫ হতে ৫৫ বছর বয়সীরা। বিশ বছরের নীচে এ রোগ হয় না বললেই চলে। ষাট বছরের পর ও এ রোগ হতে পারে, তবে তাঁদের সংখ্যা তুলনামূলক কম।
জরায়ুমুখ ক্যান্সারের উপসর্গ:
প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোন উপসর্গ থাকে না। এমনকি রোগ দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে গেলেও অনেক সময় উপসর্গ দেখা দেয় না।
- সহবাসের পর রক্ত ফোটা দেখতে পাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত
- পানির মত তরল স্রাব/সাদা ঘন স্রাব/দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব/লাল পানির মত স্রাব (সাথে রক্ত ক্ষরY হওয়া)
- মাসিক শেষ হয়ে যাওয়ার পর আবার মাসিক দেখা দেয়া (মাসে ২/৩ বার মাসিক হওয়া)/ মাসিকের সময় অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ।
দিন যত যেতে থাকে উপসর্গের মাত্রা ততই বাড়তে থাকে। যেমন তলপেটে এবং কোমরে ব্যাথা , প্রসাব পায়খানা করতে অসুবিধা হওয়া। এছাড়াও জ্বর, খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া, শারীরিক `র্বলতা ইত্যাদি সমস্যা
রোগ নির্ণয়
জরায়ুমুখ ক্যান্সারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলে কিংবা উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
স্ত্রীরোগ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অথবা এ রোগ বিষয়ে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা করে অতি সহজেই খালি চোখে রোগের চিহ্ন সনাক্ত করতে পারেন। রোগ একবারে প্রাথমিক অবস্থায় থাকলে জরায়ুমু‡খ কোন ক্ষত বা চিহ্ন থাকে না। এ ক্ষেত্রে পেপস টেস্ট (জরায়ুমুখ হতে রস নিয়ে মাইক্রোস্কপিক্যাল পরীক্ষা) করে ক্যান্সার রোগ সনাক্ত করা যায়। প্রয়োজনে কল্পোসকোপি (বিশেষ ধরনের যন্ত্র যা দিয়ে জরায়ুমুখ ২ গুন হতে ২৫ গুন বড় করে দেখা যায়) সাহায্যে পরীক্ষা করা হয়। এতে রোগের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়। আক্রান্ত স্থান হতে বায়োপসি (কেটে টিস্যু নেয়া) করে তা হিস্টো-প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা দ্বারা সনাক্ত বা রোগ নির্ণয় Kiv হয়।
রোগের পর্যায়ভুক্তকরন (stage)
চিকিৎসা শুরু করার আগে রোগের পর্যায় (stage) জানা অতি জরুরি। কারণ সব পর্যায়ের চিকিৎসা এক নয়। সকলের সব পর্যায়ের চিকিৎসা একইভাবে করা হয় না। পর্যায়ভুক্ত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো শারীরিক পরীক্ষা এবং বিশেষভাবে গাইনাকোলজিক্যাল পরীক্ষা করা। বিশেষ এ গাইনাকোলজিক্যাল পরীক্ষা করার জন্য রোগীকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে হয়। প্রয়োজনে অল্প সময়ের জন্য অজ্ঞান করারও দরকার হয়।
এ ছাড়াও কিছু ল্যাবরেটরি (মল, মূত্র, রক্ত) টেস্ট, বুকের এক্স রে, পেটের আল্ট্রাসনগ্রাফী, আই ভি ইউ এবং যন্ত্র দ্বারা পায়খানার রাস্তা, মূত্রথলি পরীক্ষা করা (বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে)।
তবে সিটি স্ক্যান, এমআরআই, পেট এর মত দামী পরীক্ষা সবার জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
জরায়ুমুখ ক্যান্সারের চিকিৎসা
জরায়ুমুখ ক্যান্সার চিকিৎসা-পরিকল্পনা প্রধানত নির্ভর করে রোগের পর্যায় উপর। চিকিৎসার সফলতা নর্ভর করে সঠিকভাবে রোগ পর্যায় (স্টেজ) করার উপর। চিকিৎসা পরিকল্পনার অন্যান্য বিষয় হলো – বায়োপসি রিপোর্ট (হিস্টোপ্যাথলজি), শারীরিক অবস্থা, বয়স ইত্যাদি।
চিকিৎসা পদ্ধতি
- অপারেশন
- রেডিওথেরাপি
- কেমোথেরাপি
অপারেশন: জরায়ুমুখ ক্যান্সারের জন্য যে বিশেষ অপারেশন (Werthems operation) তা সাধারণ অপারেশন নয়। সাধারণ অপারেশন বা শুধুমাত্র জরায়ু কেটে বাদ দেয়া হলে চিকিৎসা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। রোগ আবার গজিয়ে উঠার সম্ভাবনা খুব বেশী থাকে। এরপর রেডিওথেরাপি চিকিৎসা দিয়েও প্রায় ক্ষেত্রে রোগ নির্মূল করা যায় না।
রেডিওথেরাপি: তেজস্ক্রিয় চিকিৎসা যা যন্ত্রের সাহায্যে ক্যান্সার আক্রান্ত স্থানে প্রদান করা হয়। রেডিওথেরাপি চিকিৎসায় ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় হলো এক্স রে, গামা রে, ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রন ইত্যাদি। এতে ক্যান্সার কোষ ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। রেডিওথেরাপি দুই ধরনে র। টেলিথেরাপি এবং ব্র্যাকিথেরাপি।
টেলিথেরাপি: মেশিন দিয়ে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব হতে ত্বকের উপর দিয়ে তেজস্ক্রিয় ক্যান্সার আক্রান্ত স্থানে প্রদান করা হয়। এই চিকিৎসার সময় খুবই কম। মাত্র ২০/৫০ সে. হতে ২/১ মিনিট মাত্র। টেলিথেরাপি মেশিনের উদাহরY কোবাল্ট ৬০ টেলিথেরাপি মেশিন, লিনিয়ার এক্সিলেটর মেশিন।
ব্র্যাকিথেরাপি: মেশিন দিয়ে এপ্লিকেটরের সাহায্যে সরাসরি ক্যান্সার আক্রান্ত স্থানে এ ধর‡Yর চিকিৎসা দেওয়া হয়। অপারেশন রুমে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে ব্র্যাকিথেরাপি যন্ত্র বসাতে হয়। এ জন্য ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন প্রকার (রেডিওঅ্যাকটিভ আইসোটোপ তৈরী) ব্র্যাকিথেরাপি মেশিন।
রেডিওথেরাপি চিকিৎসার জন্য অন্যান্য আরো সহযোগী মেশিনের প্রয়োজন হয়। জরায়ুমুখ ক্যান্সার চিকিৎসায় টেলিথেরাপি এবং ব্র্যাকিথেরাপি দুই পদ্ধতিই অত্যাবশ্যক।
কেমোথেরাপি: কেমোথেরাপি চিকিৎসাও গুরুত্বপূর্ণ, তবে একক চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে নয়। একই সঙ্গে রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি চিকিৎসা জরায়ুমুখের ক্যান্সারের জন্য এখন একটি মানসম্পন্ন আধুনিক ব্যবস্থা। কারণ এতে রেডিওথেরাপির কার্যকারিতা বেড়ে যায় | বিভিন্ন গবেষণায় মধ্যে এ বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। অনিরাময়যোগ্য রোগীদের কেমোথেরাপি দিয়ে উপসর্গ মুক্ত করা যায়, জীবন মান বাড়ানো যায়।