ক্যান্সারে অবসাদ কারণ সমূহ:
অনেক কারণে ক্যান্সারে অবসাদ সৃষ্টি হয় এবং এই বিষয়গুলো পুরোপুরি ভিন্নভাবে কাজ করতে হয় যাই হোক, বিভিন্ন কারণে এই অবসাদ হতে পারে যেমন:
- ক্যান্সার : ক্যান্সারের কারণে শারীরিক পরিবর্তন হতে পারে যার জন্য অবসাদ সৃষ্টি হয় উদাহরণস্বরূপ কিছু ক্যান্সার প্রোটিন সাইটোকাইন নিঃসরণ করে যার কারণে অবসাদ হয় অন্যান্য ক্যান্সারে শরীরে শক্তি বৃদ্ধির প্রয়োজন হতে পারে যার কারণে আপনার মাংসপেশী দুর্বল হয়ে যায়, এই জন্য কিছু অংশের যেমন (লিভার, কিডনী, হার্ট এবং ফুসফুস) ক্ষতি হয় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে আপনার অবসাদ হতে পারে
- ক্যান্সার চিকিৎসা: কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, অস্ত্রোপাচার, অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন এই সব ক্লান্তির কারণ হতে পারে কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপির যখন লক্ষ্য থাকে ক্যান্সারের কোষকে ধ্বংস করার তখন এই থেরাপি সুস্থ্য কোষকেও ধ্বংস করার তখন এই থেরাপি সুস্থ্য কোষকেও ধ্বংস করে, যার কারণে ক্লান্তি সৃষ্টি হয় পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কিছু চিকিৎসা যেমন- রক্তশূণ্যতা, বমি বমি ভাব, বমি, ব্যাথা, অনিদ্রা ও মেজাজ পরিবর্তন এসব কারণে অবসাদ হতে পারে বা আরো অনেক কারণে অবসাদ হতে পারে
- রক্তশূণ্যতা: যদি চিকিৎসায় অনেক সুস্থ্য লোহিত রক্ত কণিকা ধ্বংস হয় তাহলে আপনার রক্তশূণ্যতা বেড়ে যেতে পারে ক্যান্সার যদি অস্থি মজ্জা ছড়িয়ে যায় এবং রক্ত উৎপাদনে বাধা দেয় বা রক্ত পড়ে যায় তাহলেও রক্তশূণ্যতা হতে পারে এসব কারণে অবসাদ হতে পারে
- ব্যাথা: যদি আপনি অনেক দিনের বেশি ব্যাথা অনুভব করেন যার জন্য কাজের ক্ষমতা, খাবার খাওয়া কমে যায় বা ঘুম কম হয় বা যদি বেশি চিন্তিত থাকেন তাহলেও অবসাদ হতে পারে
- আবেগ: ক্যান্সার নির্ণয়ের সময় চিন্তা বা মানসিক চাপের কারণে আপনার ক্লান্তি হতে পারে
- ঘুমের অভাব: রাতে যদি ঘুম না আসে বা বারে বারে ঘুম ভেঙ্গে যায় তাহলে ক্লান্তি অনুভব হয়
- কম পুষ্টি: দক্ষতার সাথে কাজ করার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার দরকার ক্যান্সার হলে পুষ্টির চাহিদা পরিবর্তন হয়, যার কারণে ক্লান্তি লাগতে পারে উদাহরণস্বরূপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পুষ্টির প্রয়োজন হতে পারে বাপ পর্যাপ্ত পুষ্টি নাও থাকতে পারে বা পর্যাপ্ত পুষ্টি নাও থাকতে পারে ক্ষুধা থাকে তবুও চিকিৎসার সময় বমি বমি ভাব এবং বমির পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার জন্য খাবার খেতে যদি না পারেন তাহলে পুষ্টি কমে যেতে পারে তাই ক্লান্তি লাগতে পারে
- ওষুধ: কিছু ওষুধ যেমন-ব্যাথা কমানোর ওষুধের জন্য ক্লান্তি হতে পারে
- হরমোনের পরিবর্তন: ক্যান্সার চিকিৎসার সময় হরমোনের অনেক পরিবর্তন হতে পারে এই পরিবর্তনের জন্য শরীরের ক্লান্তি হয় কেমোথেরাপি, অস্ত্রোপাচার, রেডিওথেরাপি এসব চিকিৎসার কারণে কিছু পাশ্ব-প্রতিক্রিয়া হয় এবং হরমোন পরিবর্তন হয় থাইরয়েড গ্রন্থি, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি, অণ্ডকোষ বা ডিম্বাশয়ের পরিবর্তনের কারণে ক্লান্তি হতে পারে যাদের ক্যান্সার আছে তারা সবাই ক্লান্তি অনুভব করেন; যদি আপনি ভাবেন, ক্যান্সারে ক্লান্তির মাত্রা খুব বেশি বা আপনি শক্তি পাচ্ছেন না তাহলে কেমন অনুভূতি হচ্ছে ভাবুন এই ক্লান্তি ধারাবাহিক ভাবে বা চিকিৎসার শেষেও হতে পারে এটা চিকিৎসা শেষ হবার কয়েকমাস পরও স্থায়ী হতে পারে
কখন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন:
কিছু ক্যান্সার চিকিৎসায় অবসাদ আশা করা যায় কিন্তু যদি আপনি খুঁজে পান যে, প্রতিদিনের কাজ কর্মের সময়, পুরো সপ্তাহ এই ক্লান্তি বাধা দেয় তাহলে আপনার ডাক্তারকে বলুন যদি আপনি নিচের এই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া অনুভব করেন তাহলে ডাক্তারকে সরাসরি বলুন
- এলোমেলো ভাব
- মাথা ঘোরা
- ভারসাম্য না থাকা বা কমে যাওয়া
- অক্ষমতার কারণে ২৪ ঘন্টার বেশি বিছানা ছেড়ে না ওঠা
- ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া
- যে কোন খারাপ লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে
আপনার ডাক্তারকে কি বলবেন?
যদি আপনার অবসাদ হয়, আপনার ডাক্তার আপনাকে কিছু পরীক্ষা করাবেন এবং সাধারণ কিছু প্রশ্ন করবেন এর উপসর্গ গুলো জানার জন্য ক্যান্সারের অবসাদের কারণ জানাবেন এবং চিকিৎসা করবেন
আপনার ডাক্তার এই ধরণের প্রশ্ন করতে পারেন?
- কখন থেকে আপনি ক্লান্তি অনুভব শুরু করেছেন?
- আপনার রোগ নির্ণয়ে কি কি অগ্রগতি হয়েছে?
- এটা কতক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী হয়?
- এটা কি খারাপ কিছু সৃষ্টি করে?
- এটা কি আপনার দৈনন্দিন কাজ কর্মকে প্রভাবিত করে?
- আপনার কি শ্বাসকষ্ট বা বুকের মধ্যে অস্থির লাগে?
- আপনার কি ভাল ঘুম হয়?
- আপনি কি খাবার খান এবং কখন খান?
- আপনি কি কারণে ব্যাথা অনুভব করছেন?
এসব প্রশ্নের সাথে ডাক্তার আরো কিছু শারীরিক পরীক্ষা করবেন পুনরায় পুনরায় পর্যবেক্ষণ করার জন্য চিকিৎসার কি ঔষুধ গ্রহণ করছেন বা নিয়েছেন তার জন্য আপনাকে কিছু পরীক্ষার নির্দেশ দিবেন, যেমন- রক্ত পরীক্ষা বা এক্সরে বা নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা
ক্যান্সারের ক্লান্তির অনেকগুলো কারণ হতে পারে, তাই আপনার ডাক্তার এই উপসর্গকে কমানোর জন্য অনেক পদ্ধতির কথা বলবেন এই মেডিকেলের কিছু নিয়ম এবং নিজের যত্নের কিছু পদ্ধতি অন্তর্ভূক্ত করা যায়
মেডিকেল :
হাসপাতালে চিকিৎসার ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমানে পাওয়া যায় উদাহরণসরূপ যদি আপনার রক্তশূণ্যতার কারণে ক্লান্তি হয় তাহলে রক্ত দিয়ে আপনাকে সাহায্য করতে পারে ওষুধ দিয়ে অস্থি মজ্জা উদ্দীপিত করে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদন করতে পারে যদি আপনি মানসিক চাপে থাকেন তাহলে ডাক্তার ঔষুধের নির্দেশ দিবেন যাতে আপনার চাপ কমে যায়, ক্ষুধা বাড়ে এবং আপনার ভাল অনুভূতি হয় ক্লান্তি দূর হলে আপনার কাজের উন্নতি হবে এবং ভাল ঘুমাতে পারবেন মাঝে মাঝে ঘুম ওষুধের চেয়ে ভাল কাজ দেয়
নিজের যত্ন:
অবসাদের সাথে মোকাবিলা করে নিজেকে তৈরী রাখতে পারেন যেমন-
- আপনি দিনে বিশ্রামের সময় ঠিক করুন বেশিক্ষণ একসাথে বিশ্রাম না নিয়ে কিছু সময় পর পর বিশ্রাম নিন
- শক্তি সঞ্চয় করুন: গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আপনার শক্তি সঞ্চয় করুন সময়ের সাথে অবগত থাকুন, যে সময় আপনি ভাল অনুভব করছেন, এই সময় আপনি গুরত্বপূর্ণ কাজ করার পরিকল্পনা করুন প্রয়োজন হলে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করুন
- আপনার শক্তি বজায় রাখুন প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় পানীয় পান করুন কেননা এটা আপনার শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করবে ক্যাফেইন এবং মদ এড়িয়ে যাওয়া ভাল শক্ত খাবার খেলে যদি আপনার বমি বমি ভাব এবং বমি হয় তাহলে এই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন
- চলাফেরা করা হালকা ব্যায়াম দুর্বলতা কাটিয়ে শক্তির মাত্রা রক্ষা করবে চিকিৎসা শুরু থেকে নিয়মিত ব্যায়াম করুন নিয়মিত ব্যায়াম চিকিৎসার সময় আপনার ক্লান্তি ভাব দূর করবে
আপনার ক্লান্তি সম্বন্ধে কথা বলুন:
আপনি কখনো ভাবেন না যে এই ক্লান্তি ক্যান্সার চিকিৎসার অংশ বিশেষ, যার কারণে অবসাদ অবসাদ অনুভব করছেন যদি এটা আপনার কাজকর্মে প্রভাব ফেলে আপনাকে হতাশাগ্রস্থ করে তোলে তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন