জরায়ু মুখের ক্যান্সার
কাদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশী?
প্রাপ্তবয়স্ক যে কোন নারী যে কোনো সময়ে জরায়ুমুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। খুব কম বয়সে বিয়ে করা এবং বেশী বয়সে সন্তানধারণ জরায়ুমুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যে সকল নারীর যৌনাঙ্গ অপরিষ্কার থাকে , জরায়ুমুখে ঘা বা পলিপ , লিউকোরিয়া বা শ্বেতপ্রদাহ, বিভিন্ন প্রকার যৌন রোগ থাকে তাদের এরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। যে নারীর একাধিক যৌন সঙ্গী আছে অথবা যার স্বামীর অন্য আরও এক বা একাধিক যৌন সঙ্গী আছে তাঁর এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক।
সুরক্ষার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থাঃ প্রতিরোধ ও সূচনায় সনাক্তকরণ
যৌনাঙ্গের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নারীকে জরায়ুমুখের ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে। আঠারো বছর বয়সের পরে বিয়ে করা এবং ৩০ বছর বয়সের আগে প্রথম সন্তানধারণের মাধ্যমে এই ক্যান্সারের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমানো যেতে পারে। অপরদিকে যৌন স্বেচ্ছাচার বা একাধিক ব্যক্তির সাথে যৌনকর্মে রত হওয়া পরিহার করলে জরায়ুমুখের ক্যান্সার থেকে বাঁচা যেতে পারে।
জরায়ু মুখের যে কোন পরিবর্তন ‘প্যাপটেষ্ট’ – এ সুক্ষ্ণ ভাবে ধরা পড়ে। এ পরিবর্তন দেখেই সূচনায় এই ক্যান্সার সনাক্ত করা যায়। সূচনা পর্বে যথাযোগ্য চিকিৎসা করালে জরায়ুর ক্যান্সার নিরাময় করা সম্ভব। যদি কোন নারীর পরপর তিন বছর প্যাপ টেষ্টে স্বাভাবিক ফলাফল পাওয়া যায় তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অধিক ব্যবধানে প্যাপ টেষ্ট করা যেতে পারে।
স্তন ক্যান্সার
কাদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশী ?
যে সকল নারীর ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস আছে অথবা যাঁদের মা ও বোন সহ নিকট আত্নীয়দের এ রোগ হয়েছে এবং বিশেষভাবে রজোঃ নিবৃত্তির পূর্বেই ক্যান্সার ধরা পড়েছে, সে সকল নারীর স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশী। অবশ্য স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ৪ জনেরই এ রোগের পারিবারিক ইতিহাস পাওয়া যায় না। অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যাওয়া, অধিক পরিমাণে চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া , অত্যধিক বিলম্বে সন্তান ধারণ, সন্তানদের স্তনদান না করা ও বন্ধ্যাত্ব স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। যে কোন বয়সে স্তন ক্যান্সার হতে পারে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ সম্ভাবনা বাড়তে থাকে।
সুরক্ষার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থাঃ সূচনায়সনাক্তকরণ
স্তন ক্যান্সার যত শীঘ্রই নির্ণিত হয় চিকিৎসা তত বেশী সহজ ও ফলপ্রসু হয়।
- ৪০ বছর বয়স থেকে প্রতি বছর একবার করে মেমোগ্রাম করতে হবে
- ২০-৩০ বছরের মহিলাদের জন্য ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট পরীক্ষা প্রতি ৩ বছরে একবার এবং চলিশোর্ধ মহিলাদের জন্য প্রতি বছরে একবার
- ২০ বছরের কম বয়সী মেয়েদের জন্য নিজে নিজের ব্রেস্ট পরীক্ষা করা
ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার
কাদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশী ?
অন্যান্য ক্যান্সারের মত বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের সম্ভাবনা ও বেড়ে যায়।যে সকল নারীর সন্তানাদি হয়নি, যারা স্বভাববন্ধ্যা অথবা যাঁদের ৩০ বছর বয়সের পর প্রথম সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছে ; যে সব মহিলার ৫০ বছর বয়সের পর মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে; যারা ১০ বছরের বেশী সময় ধরে ‘হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি’ গ্রহণ করেছেন ; যাঁদের ডিম্বাশয়, স্তন বা বৃহদন্ত্র ও গর্ভাশয়ের ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস আছে এবং যাঁদের স্তন ক্যান্সার হয়েছে বা হয়েছিল তাঁদের এ ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বেশী। অবশ্য যে সকল নারীর ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হয় তাঁদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই এসব কারণ পরিলক্ষিত হয় না।
সুরক্ষার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থাঃ নিয়মিত পরীক্ষা
বাৎসরিক ভিত্তিতে তলপেট পরীক্ষা ও আলট্রাসনোগ্রাম করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো অস্বাভাবিকতার লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
পিত্তথলির ক্যান্সার
কাদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশী ?
মূলতঃ মহিলাদের বেশী হয়। পিত্তথলি বা গলব্লাডারে (Gallbladder) পাথরের প্রদাহই এর মূলকারণ, তবে চর্বিজাতীয় খাবার, জন্ডিস থেকে এ ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শুরুতে লক্ষণগুলো মৃদু হয়ায় অপারেশন করতে বিলম্ব হয়, ফলে ক্যান্সার অনেক দূর অগ্রসর হয়ে যাওয়ার পর তা ধরা পড়ে।
সুরক্ষার উপায়
–চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন
– নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম
– ওজন নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি